আজ বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ রবিউল আউ:, ১৪৪৬ হিজরী
আজ বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ রবিউল আউ:, ১৪৪৬ হিজরী

নাব্যতা রক্ষায় সরকারের মহাপরিকল্পনা সফল হোক

বর্ষা ঋতুতে দেশে এবার প্রবল বর্ষণ ও তীব্র বন্যা না হলেও ব্যাপক নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি জনদুর্ভোগ বাড়িয়েছে। ফলে অগণিত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ছিন্নমূল হয়ে অনেককেই আশ্রয় নিতে হয়েছে অন্যত্র। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অনেক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রও বিলীন হয়ে গেছে। এর প্রধান কারণ যতটা না বৃষ্টি ও বন্যা, ততোধিক নদীর নাব্য হারানো। দেশের অধিকাংশ নদ-নদী ক্রমাগত হিমালয়বাহিত পলিমাটি জমে জমে ভরাট হয়ে গেছে। নদীগুলো মানুষের নিয়মিত অত্যাচার, দখল-দূষণেও জর্জরিত। সময়ে সময়ে সেসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও কিছুদিন পরেই আবার সেগুলো বেদখল হয়ে যায়। আর যাবতীয় বর্জ্য নিক্ষেপসহ পরিবেশ দূষণ তো আছেই। পদ্মা-মেঘনা-যমুনার মতো বড় নদীগুলোও নাব্য সঙ্কটে পড়ে বর্ষার আগে-পরে। এবার ভরা বর্ষা মৌসুমেও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পারাপার ব্যাহত হয়েছে নাব্য সঙ্কটের কারণে। ফলে বিপুল আর্থিক ক্ষতিসহ জনদুর্ভোগ হয়েছে অবর্ণনীয়। এমতাবস্থায় মঙ্গলবার একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও নিয়মিত নদী খনন তথা ড্রেজিংয়ের ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। এরজন্য প্রয়োজনে সারা বছর ধরে নদ-নদীগুলোতে নিয়মিত খননকাজ চালাতে বলেছেন পরিকল্পিত উপায়ে। বড় নদীগুলোকে ক্যাপিটেল ড্রেজিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার কথা বলেছেন। নিয়মিত ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে জাতীয়ভাবে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কথাও বলেছেন। এর পাশাপাশি ড্রেজিং সম্পর্কিত যেসব প্রকল্প আছে, সেগুলো অবিলম্বে একনেকে উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। নদীগুলোকে এমনভাবে খনন করতে হবে যাতে বর্ষাকালের অতিরিক্ত পানি ধরে রেখে তা সারা বছর ব্যবহার করা যায়। ফলে নদীগুলোর নাব্য রক্ষা হবে এবং পণ্য পরিবহনসহ জনসাধারণের যাতায়াতের পথ সুগম হবে। এর ফলে নদী ভাঙ্গনসহ পলিমাটি জমে চর পড়ার পরিমাণও কমে যাবে বহুলাংশে। তদুপরি দেশের নদ-নদীগুলোর সুরক্ষা তথা বেঁচে থাকার পথ সুগম ও সুনিশ্চিত হবে। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে দেশের সর্বোচ্চ আদালত নদ-নদীগুলোকে ‘জীবনসত্তা’ বলে অভিহিত করে এগুলোকে যাবতীয় দখল-দূষণমুক্ত রেখে সর্বদা নাব্য রক্ষার নির্দেশনা প্রদান করেছে। মনে রাখতে হবে জল বয়ে যায় জীবনের দিকে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীসহ রাজধানীর চারপাশের নদ-নদী সর্বোপরি দেশের সব নদী ও শাখা নদীকে দখল-দূষণমুক্ত করে সারা বছর ধরে নাব্য রাখার জন্য সরকার একটি মাস্টারপ্ল্যান তথা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে একদিকে যেমন নদীমাতৃক বাংলাদেশের আবহমান চিরায়ত প্রকৃতি ও রূপ ফিরে আসবে, তেমনি নৌযান চলাচলের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ মানুষের যাতায়াতের পথ সহজ, সুগম ও সুলভ হবে। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান করা হয়েছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীকে। এই কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে। প্রাথমিকভাবে এর জন্য সময়সীমা ধরা হয়েছে ১০ বছর, যা বাড়তে পারে আগামীতে। উল্লেখ্য, লন্ডনের বিখ্যাত টেমস নদীও এক সময় গার্বেজ ডাম্পিং সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল এর নাব্যাবস্থা। সেই টেমসকে বর্তমান নাব্য ও পূর্বাবস্থায় ফেরাতে সময় লেগেছে ৫০-৫৫ বছর। বর্তমান সরকার যে দেশের নদ-নদীকে সারা বছর ধরে নাব্য, দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে সচেষ্ট ও আন্তরিক তা ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে। তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, বালু ও শীতলক্ষ্যায় প্রায় সর্বত্র নিয়মিতই চলছে উচ্ছেদ অভিযান। আমরা এর সফলতা কামনা করি।