আজ বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ রবিউল আউ:, ১৪৪৬ হিজরী
আজ বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ রবিউল আউ:, ১৪৪৬ হিজরী
একান্ত সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান

বৃহৎ প্রকল্প আর ভূরাজনীতি একাকার হয়ে গেছে

প্রশ্ন: সরকারের বৃহৎ প্রকল্পগুলোর ওপর কোভিড-১৯ কী প্রভাব ফেলেছে?

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান: শুধু বাংলাদেশেই নয়, কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী বৃহৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। আমাদের দেশে এটা আরেকটু বেশি প্রকট। কেননা, চীনা ও ভারতীয় ঠিকাদারেরাই আমাদের বৃহৎ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন করছে। চীন কোভিড-১৯–এর উৎসস্থল আর আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয়।

প্রশ্ন: আট বছর আগে আপনি বলেছিলেন, পদ্মা সেতুর জন্য প্রতিবছর আমাদের বাড়তি ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের দায় পরিশোধ করতে হবে। এই অঙ্ক কমল না বাড়ল?
ফাওজুল কবির খান: সরকারকে সতর্ক করার জন্য শঙ্কা হিসেবে এ বাড়তি দায়ের কথা তখন বলেছিলাম। মনেপ্রাণে আশা করেছিলাম, আমার এ আশঙ্কা সত্যি না হোক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে নকশার সমস্যা, অব্যবস্থাপনা, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আমার আশঙ্কা এখন সত্যে পরিণত হয়েছে।

প্রশ্ন: ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালে পদ্মা সেতু এবং ডিসেম্বরে মেট্রোরেল দিয়ে চলাচলের স্বপ্ন কি দেখছেন?
ফাওজুল কবির খান: আমার এক বন্ধু সম্প্রতি পদ্মা সেতু এলাকা ঘুরে এসেছেন। তাঁর ধারণা, পদ্মা সেতু পুরোপুরি চালু হতে আরও বছর দুই সময় লাগবে। সময় বাড়লে ব্যয়ও বাড়বে। প্রকল্প দুটি ভিন্ন হলেও বঙ্গবন্ধু ও পদ্মা সেতুর তুলনা এখানে প্রাসঙ্গিক। দৈর্ঘ্যে পদ্মা সেতু বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রায় ১ দশমিক ৩ গুণ। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে সময় লেগেছে ৪ বছর ৪ মাস। পদ্মা সেতু যদি ২০২২ সালেও চালু হয়, তাহলেও এতে সময় লাগবে ৭ বছর ৬ মাস, অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমান অনুমিত খরচ ও ভবিষ্যতে বাড়তি খরচ মিলিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় হবে বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রায় চার গুণ। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, সেতু আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করছি বটে, তবে কত গুণ মূল্যে, কতটা সময়ে? শেষমেশ, এ প্রকল্পের ব্যয় ও সুবিধার বিশ্লেষণ কোথায় দাঁড়াল? প্রকল্পটি করে দেশের নিট সম্পদ বাড়ল না কমল?

প্রশ্ন: মেট্রোরেলের বর্তমান সময়সূচি অতিমাত্রায় আশাবাদী। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনার প্রভাব।এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। আপনি কী মনে করছেন?
ফাওজুল কবির খান: পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিষয়ে আমার জ্ঞান সীমিত। যত দূর জানি, এটা ব্যয়বহুল ও দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ। রাশিয়ার মতো পরাশক্তি এর সঙ্গে জড়িত। এখানে পারমাণবিক প্রযুক্তি আহরণের সুযোগ এবং তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকির প্রশ্ন জড়িত। তাই ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনো একটা প্রকল্প গ্রহণ করলেই তা চালিয়ে যেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। এই তো সেদিন ভারত সরকার রিলায়েন্স নেভাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে নেভির জন্য নৌযান ক্রয়ের আড়াই হাজার কোটি ভারতীয় রুপির চুক্তি বাতিল করেছে। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করেই আমাদের বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ, বাস্তবায়ন বা বাতিল করতে হবে।

প্রশ্ন: দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থায় কি আপনি সন্তুষ্ট?
ফাওজুল কবির খান: আপনার প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে আমি সামগ্রিক বিদ্যুৎ খাত সম্পর্কে কিছু বলতে চাই, যার মধ্যে আপনার প্রশ্নের জবাবটিও নিহিত। টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো) বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা করার সময় তাদের বলেছিলাম, তোমাদের চাহিদার হিসাব অতিমাত্রায় উচ্চাভিলাষী। কেননা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ প্রকল্প মানেই চাহিদা বৃদ্ধি নয়। গ্রাহক সংযোগই বিদ্যুতের চাহিদার পরিমাণ নির্ধারণ করে। প্রথমত, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপাত্ত নির্ভরযোগ্য নয়। দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে বিদ্যুতের মূল্য ক্রমবর্ধমান। বিদ্যুতের চাহিদা পরিবর্তনশীল। বিদ্যুতের দাম বাড়লে চাহিদা কমবে। তৃতীয়ত, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের কর্মদক্ষতা ও সততা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

প্রশ্ন: বৃহৎ প্রকল্প থেকে মানুষ কেমন সুবিধা পাচ্ছে?
ফাওজুল কবির খান: ধরুন, বিপুল ব্যয়ে সন্দ্বীপে সাবমেরিন কেব্লসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হলো। সেখান থেকে দুই ধরনের কথা আমরা শুনব। এক. বিদ্যুৎ বিভাগ ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির কারণে তারা বিদ্যুৎ–সংযোগ পাচ্ছে না। দুই. আরেক দল বলবে, আমাদের সৌরবিদ্যুৎ আছে। আমরা লাইনের বিদ্যুৎ চাই না। লাইনের বিদ্যুতে খরচ অনেক বেশি। একবার নিলে বিদ্যুৎ–কর্মীদের ভৌতিক বিল ও হয়রানিতে শেষ।

প্রশ্ন: উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিরোধী দলের মত নেওয়ার প্রয়োজন এখন আর কেউ মুখেও আনে না। কিন্তু মেগা প্রকল্পে স্বাধীন বিশেষজ্ঞতের মত কতটা প্রাধান্য পাচ্ছে?
ফাওজুল কবির খান: এ প্রসঙ্গে আবার টেপকোর কথায় আসতে হয়। আমি তখনই বলেছিলাম, কয়লা থকে প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে অভিক্ষেপ তোমরা দিয়েছ, তা ঠিক নয়। কারণ, এ জন্য যে লজিস্টিক ব্যবস্থা প্রয়োজন, তা আমাদের নেই। এ লক্ষ্য অর্জিত হবে না। এ ছাড়া দ্রুত জ্বালানি আইন, ২০১০ বাতিল করার জন্য বহু বছর ধরে বিভিন্ন ফোরামে আমি বলে আসছি। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে ও অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি সৃষ্টি হবে। দুঃখজনকভাবে আমার আশঙ্কাগুলো সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্য সরকারকে আর্থিক মাশুল দিতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও দিতে হবে।

প্রশ্ন: এর আর্থিক মূল্য কত, তা কি দেশের করদাতারা কখনো জানতে পারবেন?
ফাওজুল কবির খান: সরকারের সমস্যা হচ্ছে বিশেষজ্ঞ ও ভিন্নমতকে বিরোধী দলের মতামতের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা। সৎ বিশেষজ্ঞের কোনো রাজনৈতিক দল নেই। তাঁর আনুগত্য কোনো দলের প্রতি নয়, বরং তথ্য–উপাত্তভিত্তিক, কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের প্রতি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞ মতামতকে উপেক্ষা করার জন্য আমেরিকাকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে এবং দেশটির প্রেসিডেন্টের তীব্র নিন্দা হচ্ছে। তাই স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের কথা আমলে নিলে সরকার উপকৃত হবে। ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল থেকেও জাতি বাঁচবে।

প্রশ্ন: এখন শোনা যাচ্ছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা ব্যবহার করা হবে না। তাহলে এত দিন এত আন্দোলন চলল কেন? এর অর্থদণ্ড কত?
ফাওজুল কবির খান: এখন হুট করে বলা হচ্ছে, কয়লার পরিবর্তে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র এলএনজি দিয়ে পরিচালিত হবে। এলএনজি আমদানির জন্য দুটি চুক্তি হয়েছে। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি, এগুলো ব্যয়বহুল ও আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। দেশে আমরা ইতিমধ্যে ‘বিদ্যুৎ ব্যারন’ সৃষ্টি করেছি। এখন ‘জ্বালানি ব্যারন’ সৃষ্টি হবে। এলএনজি দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার সিদ্ধান্তের আগে বিদ্যমান এলএনজি আমদানি চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করা দরকার। এলএনজির বাজার উন্মুক্ত করতে হবে। সরকারি সংস্থাই এলএনজি বা বিদ্যুতের একমাত্র ক্রেতা, এই মডেল থেকে সরে এসে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পেট্রোবাংলাকে ভারমুক্ত করতে হবে। পৃথিবীর সব দেশই থেকে এই ‘একক ক্রেতা’ মডেল থেকে সরে এসেছে। ২০০৮ সালে সরকার মার্চেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট নীতি প্রণয়ন করলেও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

প্রশ্ন: ঝুঁকি ভাগ করে নেওয়ার জন্য চীন বিদেশে অনেক বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা নেয়। বাংলাদেশে তারা কী কৌশল নিচ্ছে?

ফাওজুল কবির খান: না, নিজের দেশের প্রকল্পেই তারা শুধু তা করে থাকে। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার আছে। ২০১২ সালে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমি এ কথাই বলেছিলাম। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা পদ্মা সেতু থেকে সরে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশ কেবল সহজ শর্তের ঋণ থেকে নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এসব সংস্থার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকেও বঞ্চিত হবে। বারবার নকশা পাল্টে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও ব্যয় হয়তো সে ক্ষেত্রে বাড়ত না।

প্রশ্ন: চীন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর পর, বিশেষ করে ২৭টি সমঝোতা স্মারকে মোট সাড়ে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ও অর্থায়নের ঘোষণা করেছে। অনেকে বলছেন, বাস্তবে এ টাকার সামান্যই বাংলাদেশে ঢুকেছে।
ফাওজুল কবির খান: এসব ক্ষেত্রে সচরাচর বাগাড়ম্বর থাকে। তা ছাড়া কতটা অর্থসহায়তা বাংলাদেশ পাবে, তা চীনের বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক স্বার্থের ওপর নির্ভরশীল। সংবাদপত্রে দেখলাম, মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে চীনবিরোধী ভারত-মার্কিন আঁতাতে অন্তর্ভুক্ত করতে ঢাকায় আসছেন। এ ধরনের কোনো আঁতাতে যোগ দেওয়া আমাদের জন্য আত্মঘাতী হবে। মনে রাখতে হবে ‘রাষ্ট্রের কোনো স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু নেই, আছে কেবল স্থায়ী স্বার্থ’। লাদাখে চীনা ‘আগ্রাসন’ সত্ত্বেও ভারতীয় দৈনিক ডেকান হেরাল্ড–এর সংবাদ অনুযায়ী, জাতিসংঘে চীনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা করার মার্কিন ও ইউরোপীয় উদ্যোগে ভারত সায় দেয়নি। আমাদেরও একই নীতি অনুসরণ করতে হবে।

প্রশ্ন: চীন পাশে দাঁড়ানোর পর বাংলাদেশের প্রতি এডিবি, জাইকা, ইইউ বা অন্যান্য উন্নয়ন–সহযোগীর আচরণে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি?
ফাওজুল কবির খান: আমার তা মনে হয় না।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির বিরাট অভিযোগ উঠেছে। বৃহৎ প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রেও দুর্নীতির অভিযোগ আছে কি?
ফাওজুল কবির খান: স্বাস্থ্য খাত থেকে অবকাঠামো প্রকল্প পর্যন্ত আমাদের সরকারি ক্রয়প্রক্রিয়াগুলো বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। নারায়ণগঞ্জের ডেমু ট্রেনের কথাই ধরুন না। প্রায় ৪২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০টি ডেমু ট্রেন চীন থেকে আমদানি করা হয়। এ প্রকল্পে সরকারের মোট ব্যয় হয় ৬৫৫ কোটি টাকা। আমদানি করার পর ৭ বছরও যায়নি, ২০ ট্রেনের অর্ধেকই বিকল। এরপরও নতুন করে ডেমু ট্রেন কেনার প্রস্তাব করলে সরকার তা নাকচ করে দেয়। দুর্নীতি ছাড়া এর আর কী ব্যাখ্যা আছে? রূপপুরের বালিশ ক্রয়ের মতো ছিটফোঁটা সংবাদ যা আসছে, তাতে বৃহৎ প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি হচ্ছেÑএমন ধারণা অমূলক নয়।

প্রশ্ন: সোনাদিয়া বাদে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প কতগুলো নতুন চাকরি দিচ্ছে?
ফাওজুল কবির খান: আসলে সরকারের মধ্যে যে বৃহৎ প্রকল্প–আসক্তি লক্ষ করছি, তার আর্থিক, কারিগরি ও ব্যবস্থাপনাগত সংস্থান আমাদের নেই। বৃহৎ প্রকল্প আমাদের প্রয়োজন আছে। তবে তা হতে হবে আমাদের সাধ্যের মধ্যে। বেশির ভাগ বৃহৎ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক, কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা সংস্থান না থাকায় বারবার নকশার ত্রুটি দেখা যাচ্ছে; বাস্তবায়নের ব্যয় ও সময় হু হু করে বাড়ছে। এ ছাড়া মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ দিতে গিয়ে অর্থের সংস্থান না থাকায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অতিপ্রয়োজনীয় বড়, মাঝারি ও ছোট প্রকল্পে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন তাই বিলম্বিত হচ্ছে এবং ব্যয় বাড়ছে।

প্রশ্ন: অবকাঠোমো তৈরিতে আঞ্চলিক মাত্রা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে কি?
ফাওজুল কবির খান: একটা সমীক্ষার বিষয়ে অ্যাপেক্সের কর্ণধার সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তিনি বললেন, ভালুকা অঞ্চলে তাঁরা কর্মী ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন। যাতায়াতে সময় বেশি লাগায় দক্ষ কর্মীরা অপেক্ষাকৃত কম বেতনে ঢাকায় চাকরি নিচ্ছেন। অথচ দ্রুতগামী একটা কমিউটার ট্রেন হলে তাঁদের ধরে রাখা যেত। তিনি জানান, এ জন্য শিল্পপতিরা আগাম টিকিট কিনে সরকারকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

প্রশ্ন: ২০৩০ সালের মধ্যে প্রস্তাবিত ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে রপ্তানি আয় আরও ৪০ বিলিয়ন ডলার যুক্ত হবে কি? এর মধ্যে আপনি চীন-ভারত টানাপোড়েনের কোনো প্রভাব আশঙ্কা করেন?
ফাওজুল কবির খান: কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই, এমন একটা কথা আছে। এ ক্ষেত্রে পিপিপি প্রকল্পের কথা বলা যায়। প্রকল্পের তালিকা বেশ দীর্ঘ। প্রায় ৮০টি প্রকল্প আছে, কিন্তু অর্জন খুবই নগণ্য। আমি বেশ কয়েকজন প্রাইভেট ইকোনমিক জোন বাস্তবায়নকারী ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা প্রকল্প নিয়ে রীতিমতো সমস্যায় আছেন। জমি, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের সমস্যা। আমাদের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও পরিষেবা কোম্পানিগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করতে না পারলে, তাদের কাজের ধরন না পাল্টালে অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিদেশি বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের সব উদ্যোগই ভেস্তে যাবে।

প্রশ্ন: মেজর জেনারেল (অব.) মুনিরুজ্জামান পরাশক্তিগুলোর টানাপোড়েনে বাংলাদেশকে ‘ভূকৌশলগত স্বাধীনতা’ ধরে রাখার ওপর জোর দিয়েছেন।

ফাওজুল কবির খান: বৃহৎ প্রকল্প আর ভূরাজনীতি একাকার হয়ে গেছে, এটা সত্য। চীন বিশ্বব্যাপী বৃহৎ প্রকল্পে সহায়তাকে তাদের বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক স্বার্থে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা মিয়ানমার থেকে শিক্ষা নিতে পারি। একটি গণহত্যায় অভিযুক্ত স্বৈরাচারী সরকার ও দেশ কীভাবে চীন, ভারত ও জাপানকে তাদের পক্ষে নিয়ে গেল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ অবস্থানে ঠেলে দিল, সেটা সত্যিই বিস্ময়কর!